ভাইরালসর্বশেষ

পথ দুর্ঘটনায় মৃত সংগ্রাম ভট্টাচার্য, সাতটি অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত তার পরিবারের

করোনা আবহের মধ্যে প্রথম অঙ্গদান সংগ্রাম ভট্টাচার্যের পরিবারের তরফে। পথ দুর্ঘটনায় মৃত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ সংগ্রাম ভট্টাচার্যের সাতটি অঙ্গ দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার। ১৪ তারিখ কল্যাণীর এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে যান সংগ্রাম ভট্টাচার্য (Sangram Bhattacharya Goes To Kalyani, Nadia To Meet A Doctor)। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হয় ভাটপাড়ার বাসিন্দা সংগ্রাম ভট্টাচার্য। এই ঘটনায় শোকোস্তব্ধ ৩২ বছরের সংগ্রাম ভট্টাচার্যের পরিবার। তাঁর পরিবারে রয়েছে মা, বাবা, দাদা ও স্ত্রী।

১৪ তারিখ কল্যাণী থেকে ফেরার পথে বাইকের স্ট্যান্ড তুলতে ভুলে যাওয়ায় রাস্তায় স্পিড ব্রেকারে ধাক্কা লেগে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যান সংগ্রাম। এরপর তার কান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তার মাথায় হেলমেট থাকা সত্বেও হেলমেটের ফিতে বাঁধা না থাকায় এই বিপত্তি ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণী মেডিকেল হাসপাতালে। পরে ১৫ তারিখ ভোরে ভর্তি করা হয় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে। গতকাল চিকিৎসকরা তার পরিবারকে জানান ব্রেন ডেথ হয়েছে সংগ্রাম ভট্টাচার্যের (Brain Death Occurs In Case Of Sangram’s Bike Accident)। এরপর ভট্টাচার্য পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অঙ্গ দান করার (Family Of Brain Death Man, Wishes To Donate Donate His 7 Body Parts)।

১৬ তারিখ রাত্রে স্বাস্থ্য দপ্তরের ব্রেন ডেথ অডিট কমিটি এবং রিজিওনাল অর্গান ট্রানসপ্ল‍্যান্ট অর্গানাইজেশনের (Members Of Regional Organ Transplant Organization) সদস্যরা অ্যাপোলো হাসপাতালে আসেন। পরীক্ষার পরে তারাও জানান ব্রেন ডেথ হয়েছে সংগ্রামের। সংগ্রামের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের ছেলে সংগ্রামের এত কম বয়সে মৃত্যু তারা মানতে পারছেন না। তবু কয়েকজন মানুষ সংগ্রামের অঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাকবেন। সেজন্যই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সংগ্রামের লিভার দেওয়া হচ্ছে আগরতলার বাসিন্দা ৫৯ বছরের এক ব্যক্তিকে। গতকাল ত্রিপুরা থেকে তাঁকে অ্যাপোলো হাসপাতালে (Tripura To Apollo Hospital) আনা হয়েছে। এখানেই হবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন। লিলুয়ার ২৯ বছরের এক যুবক পাচ্ছেন সংগ্রামের একটি কিডনি। এটিও প্রতিস্থাপিত হবে অ্যাপোলো হাসপাতালে। হৃদযন্ত্র পাচ্ছে হাওড়ার নারায়না মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ বছরের এক কিশোরী। দিশা হাসপাতালকে দান করা হচ্ছে দুটি কর্নিয়া। অন্য আরেকটি কিডনি এবং ত্বক দান করা হচ্ছে এসএসকেএমকে।

অঙ্গ নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি পৃথক গ্রিন করিডোর তৈরি করা হবে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে। একটি নারায়না হাসপাতালে হৃদযন্ত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য। অন্যটি এসএসকেএম-এ (SSKM Hospital, Kolkata)। অস্ত্রোপচার করে অঙ্গ বের করার এবং প্রতিস্থাপনের জন্য অ্যাপোলো হাসপাতালে তৈরি হয়েছে ৫৬ জনের একটি দল। প্রত্যেকেরই ইতিমধ্যে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে এবং রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরই কাজ শুরু করেছেন তারা। আজ‌ই ময়নাতদন্তের পর সংগ্রামের দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে। শোকের মধ্যেও মানবিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকলো সংগ্রামের পরিবার।