বিনোদনভাইরালসর্বশেষ

ছোটবেলা থেকেই সংগ্রামী কঙ্গনা রানাওয়াতের ‘কুইন’ হয়ে ওঠার গল্প

ভারতীয় সিনেমাতে কঙ্গনা রানাওয়াত এক অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম। সেই সাথে তিনি একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন।তিনি বিভিন্ন ধরনের সিনেমাতে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে এক অন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার অভিনয় দক্ষতার জন্য তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।২০২০ সালে ইন্ডিয়ান গভমেন্ট কঙ্গনা রানাওয়াত কে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করেন। বেশিরভাগ সময়ই তিনি মিডিয়াতে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন। তো চলুন জেনে নেই তার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই সংগ্রামের গল্প (Life story of queen Kangana Ranaut)।

১৯৮৭ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখে কঙ্গনা হিমাচল প্রদেশের মান্দি জেলার একটি ছোট্ট শহরে জন্ম নেন। তার পিতার নাম অমর দীপ রানাওয়াত যিনি একজন বিজনেসম্যান এবং তার মাতা আশা রানাওয়াত স্কুলের একজন ম্যাডাম। তার বড় বোনের নাম রঙ্গোলি এবং ছোট ভাইয়ের নাম আকশাত।

কঙ্গনা ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত একগুঁয়ে এবং সংগ্রামী টাইপের ছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন,” বাবা আমার ভাইকে যদি প্লাস্টিকের বন্দুক এবং আমার জন্য একটা পুতুল এনে দেয় তাহলে আমি তা কোনদিনই স্বীকার করব না। দুজনের জন্য কেন দুই ধরনের হলো তা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলবো।”

তিনি ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু করার চেষ্টা করতেন, বিশেষ করে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে। আর এসব দেখে তার প্রতিবেশীরা তাকে অদ্ভুত বলতো। চন্ডী করে তিনি ডিএভি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন সাইন্স বিষয়ে। আর ছোটবেলা থেকে তিনি ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন তার বাবা-মার অনুরোধে। তবে তিনি একটা ইউনিট টেস্টের ছোট পরীক্ষায় কেমিস্ট্রি বিষয়ে টুয়েলভে পড়াকালীন সময়ে ফেল করে বসেন। ফলে তিনি তার ডাক্তার হওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন। আর সেই বছরের এইমস পরীক্ষাতে বসেননি।

আর সেই সময় কাল থেকেই নতুন করে তার সংগ্রামের শুরু। তিনি মাত্র 16 বছর বয়সে দিল্লিতে চলে আসেন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নতুন কিছু করতে। আর এর ফলে তার বাবা-মার সাথে ঝগড়া হয়। তার বাবা বলেছিলেন যে সে যা করতে যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অলৌকিক।

দিল্লিতে এসে বুঝতে পারছিলেন না কঙ্গনা কি করবেন। সেই মুহূর্তে এলিট মডেলিং এজেন্সি কঙ্গনা রানাওয়াতকে দেখে পছন্দ করে ফেলে এবং তাকে মডেলিং করতে বলে তাদের হয়ে। তিনি কয়েকটা কাজ করেছিলেন কিন্তু পছন্দ হচ্ছিল না তার। কারণে সেখানে কোনো নতুনত্ব ছিল না। এরপর তিনি অস্মিতা থিয়েটার গ্রুপ এ ভর্তি হয়ে অরবিন্দ গৌড়ের থেকে থিয়েটারে তালিম নিতে শুরু করেন।

এরপর একটা মজার ঘটনা ঘটে যায়। তিনি গ্রিস কারনাদের লেখা তালদান্দা তে অভিনয় করার সময় পুরুষ অভিনেতাটি কোনো কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। বলে কঙ্গনা সেই সময়ে একই সাথে সেই পুরুষের চরিত্রে এবং মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। আর তার অভিনয় অডিটের কাছে ভীষণভাবে প্রশংসিত হয়। ফলে কঙ্গনা মনের মধ্যে জোর পান এবং সিনেমাতে অভিনয় করার জন্য মুম্বাইতে চলে আসেন। আর সেখানে এসে তিনি আশাচন্দ্র ড্রামা স্কুলে চার মাসের কোর্সে ভর্তি হন।

আর সেই সময় তাকে খুব কষ্টের সাথে জীবন কাটাতে হয়েছিল। কোন কোন দিন শুধুমাত্র রুটি এবং আচার খেয়ে থাকতে হতো। অপরদিকে তিনি তার বাবার থেকে টাকা পয়সার সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন। আর এর ফলে তাদের সম্পর্কে অবনতি ঘটে। যদিও এর জন্য তিনি পরবর্তীকালে অনেক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে তার আত্মীয় স্বজনরা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার জন্য ভীষণ অখুশি হয়েছিলেন।

সিনেমাতে অভিষেক
২০০৪ সালে আই লাভ ইউ বস নামে একটি সিনেমাতে প্রডিউসার রমেশ শর্মা এবং পাহালাজ নিলানী কঙ্গনা রানাওয়াত কি অভিনয় করার কথা ঘোষণা করেন। এর পরের বছর একজন এজেন্ট তাকে মহেশ ভাটের কাছে নিয়ে যায় আর সেখানে গিয়ে তার অনুরাগ বসুর সঙ্গে পরিচয় হয়। আর তিনি সেখানেই রোমান্টিক থ্রিলার সিনেমা গ্যাংস্টার এ অভিনয় করার জন্য অডিশন দেন। তবে মহেশ ভাটের কাছে মনে হয়েছিল যে কঙ্গনা এই রোলে জন্য বয়স কম হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি চিত্রাঙ্গদা সিং কে অভিনয়ের জন্য সাইন করেন।

কিন্তু পরবর্তীকালে চিত্রাঙ্গদা সিং কোন কারণে অনুপস্থিত হয়ে যান। ফলে কঙ্গনাকে এক অ্যালকোহলিক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হয় আর তার সঙ্গে ছিলেন এক সহমর্মী বন্ধু। আর এই সম্বন্ধে বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন ইমরান হাশমি। প্রকৃতপক্ষে কঙ্গনা রানাউতের তখন বয়স ছিল মাত্র 17 বছর ফলে তাকে এই সিনেমায় সিমরান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছিল। ২০০৬ সালে কঙ্গনা রানাওয়াত থ্রিলার সিনেমা গ্যাংস্টার এই অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমাতে অভিযোগ করেন। তার অভিনয় দেখে দর্শকরা ভীষণ খুশি হয় এবং এটি বক্সঅফিসে লক্ষ্মী এনে দেয়।

ওই বছরই তিনি ওহ লাম্ভে সিনেমাতে অভিনয় করেন। এরপর 2007 সালে লাইফ ইন এ মেট্রো এবং 2008 সালে ফ্যাশন সিনেমাতে অভিনয় করেন। তিনি ফ্যাশন সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য সহ অভিনেত্রী হিসেবে ন্যাশনাল ফিল্ম এওয়ার্ড লাভ করেন।
এর পরবর্তীকালে তিনি রাজ দি মিস্ট্রি কন্টিনুয়াস এন্ড ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই সিনেমাগুলি বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলে দেয়। এছাড়া ২০১১ সালে তানু ওয়েডস মানু সিনেমাতে একটু কমেডি টাইপের চরিত্র লোকজনের কাছে প্রশংসিত হয়। এরপর 2014 সালে তিনি কমেডি ড্রামা সিনেমা কুইনে অভিনয় করেন। আর এই সিনেমাতে তিনি এক লাজুক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।

এই মুহূর্তে কঙ্গনা রানাওয়াত কে মিডিয়াতে সবথেকে বড় ফ্যাশনেবল সেলিব্রিটিদের মধ্যে একজন হিসেবে ধরা হয়। অপরদিকে তিনি তার নিজস্ব পোশাকের ব্রান্ড ভেরো মোদা লঞ্চ করেছেন। তিনি মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের মতামত রাখার জন্য হেডলাইনে চলে আসেন এবং প্রচুর কন্ট্রোভার্সি সৃষ্টি হয়।

ব্যক্তিগত জীবন
শুরুর দিকে তিনি প্রচুর অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল কারণ অভিনেত্রী হওয়ার জন্য যা প্রিপারেশন লাগে তা তার ছিল না। ফলে তিনি বলেছেন যে, অন্যেরা তাকে মনে করতো যে তিনি ভুল জায়গাতে ঢুকে বসে আছেন। অপরদিকে শুরুতে তিনি ইংরেজি সাবলীলভাবে বলতে পারতেন না। ফলে লোকজন তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত। এখন লোকজন তাকে বলছে যে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। ফলে তার মনে হয় তিনি কোথাও নিজেকে বন্দী করে ফেলেছেন।

এরপর আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে কঙ্গনা রানাওয়াত এর ঝামেলা সৃষ্টি হয়। কঙ্গনা পাঞ্চালির বিরুদ্ধে নির্যাতন করার কেস দেন। পরবর্তীকালে পাঞ্চালি একটা ইন্টারভিউ তে বলে যে রানাওয়াতের কাছ থেকে তিনি 2.5 মিলিয়ন টাকা পাবেন। পরে অবশ্য রানাওয়াতের ম্যানেজার বলেন, শারীরিকভাবে নির্যাতন করার পর পাঞ্চালির কঙ্গনার কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা পয়সা চাওয়ার অধিকার নেই।

2008 সালে কঙ্গনা এবং অধ্যায়ন সুমনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অবশ্য এক বছর পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অপরদিকে 2010 সালে রানাওয়াত এবং নিকোলাস এর মধ্যে রিলেশনশিপ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে হৃত্বিক রোশন কঙ্গনার বিরুদ্ধে হ্যারাসমেন্টের চার্জ আনেন। তবে কঙ্গনা এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন যে, তাদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে ঋত্বিক ডিভোর্স পাকাপোক্ত করতে এই কাজ করেছেন।

কঙ্গনা অভিনীত সিনেমাসমূহ:

সিনেমার নামবছরভূমিকা
১.গ্যাংস্টার২০০৬সিমরান
২.ওহ লামহে২০০৬সানা আজিম
৩.শাকালাকা বুম বুম ২০০৭রুহি
৪.লাইফ ইন এ মেট্রো ২০০৭নেহা
৫.ধাম ধুম ২০০৮শেনবাগা
৬.ফ্যাশন ২০০৮সোনালী গুজরাল
৭.রাজ: দা মিস্ট্রি কন্টিনিউস ২০০৯নন্দিতা চোপড়া
৮.বারা রাহা ২০০৯পূজা
৯.এক নিরাঞ্জন ২০০৯সামিরা
১০.কাইটস ২০১০জিনা গ্রোভার
১১.ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই ২০১০রেহানা
১২.নক আউট ২০১০নিধি শ্রীবাস্তব
১৩.নো প্রবলেম২০১০সঞ্জনা
১৪.তানু ওয়েডস মানু ২০১১তনুজা ‘তনু’ ত্রিবেদী
১৫.গেম ২০১১শিয়া অগ্নিহোত্রী
১৬.রেডি ২০১১কিরণ
১৭.ডাবল ধামাল ২০১১কিয়া
১৮.রাস্কেলস ২০১১খুশি
১৯.মিলে না মিলে হাম ২০১১আনুশকা শ্রীবাস্তব
২০.তেজ ২০১২নিকিতা মালহোত্রা
২১.শুট আউট এট ওয়াডালা২০১৩বিদ্যা জোশি
২২.কৃষ্ 3 ২০১৩কায়া
২৩.রাজ্য ২০১৩রাজু
২৪.কুইন ২০১৪রানী মেহরা
২৫.রিভলবার রানি২০১৪অলকা সিং
২৬. উন্গলি ২০১৪মায়া
২৭.তানু ওয়েডস মানু রিটার্নস ২০১৫কুসুম দত্ত/ তনুজা তনুজা ত্রিবেদী
২৮.আই লাভ এন ওয়াই ২০১৫টিক্কু ভার্মা
২৯.কাট্টি বাট্টি ২০১৫পায়েল
৩০.রঙ্গন২০১৭জুলিয়া
৩১.সিমরান২০১৭প্রফুল্ল প্যাটেল
৩২.মণিকর্ণিকা দ্যা কুইন অফ ঝাঁসি২০১৯রানী লক্ষ্মীবাঈ
৩৩.জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া২০১৯ববি গ্রেওয়াল
৩৪.পাঙ্গা২০২০জয়া নিগম
৩৫.থালাইভি২০২০জয়ললিতা

Surajit Joarder

৩৬৫ রিপোর্টার বাংলা ওয়েবসাইট এর অ্যাডমিন। আমি বিনোদন সম্পর্কিত টপিক ভীষণ ভালোবাসি। তাই আমি মেইনলি মুভি, ওয়েব সিরিজ, সিরিয়াল নিয়ে পোস্ট লিখে থাকি।