কর্মসংস্থানসর্বশেষ

34 বছর পর শিক্ষাক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পরিবর্তন কেন্দ্র সরকারের! পড়া ছেড়ে দিলেও নষ্ট হবেনা বছর

দীর্ঘকাল যাবৎ শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক একই পদ্ধতিতে চলছিল। সুদীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক কাল পরে জাতীয় শিক্ষানীতি তে পরিবর্তন ঘটানো হলো। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নতুন নিয়মে অনেকগুলো সংস্কার সাধিত করা হলো। আর বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

বিস্তারিত

বুধবার নতুন এক জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy) সম্পর্কিত নিয়ম জারি করল কেন্দ্র সরকার। আর এই নতুন নিয়মে স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষার পর্যায় অনেকগুলো সংস্কারমূলক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এর ভেতর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা সেটা হল 2035 সালের মধ্যে স্কুল স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর কমপক্ষে 50 ভাগ শিক্ষার্থী যাতে উচ্চতর শিক্ষায় অ্যাডমিশন নেয় তার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেওয়া। এরই সঙ্গে সঙ্গে একজন পড়ুয়া অনেকবার ভর্তি এবং বাদ দিতে পারবেন। অর্থাৎ এই নীতিতে যেকোনো সময় ভর্তি হওয়া যাবে কলেজে এবং বাদ দিয়ে চলে আসা যাবে। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন করা হবে।

বুধবার দিল্লির এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভেরকর ব্যক্ত করেন,”প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। আর এখানেই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর চাহিদার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন ধরনের নিয়ম চালু করা হয়েছে।বিগত 34 বছর যাবৎ শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো প্রকার পরিবর্তন আনা হয়নি। এই পরিবর্তন আনা অবশ্যম্ভাবী ছিল। আমার একান্ত বিশ্বাস আমাদের ভারতবাসী তথা গোটা পৃথিবী শিক্ষার এই নতুন নিয়মকে অভিনন্দন জানাবে।”

এছাড়াও উচ্চ শিক্ষা সচিব অমিত খারে বুধবারের এই দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করলেন। তিনি একটি আশার কথাও বললেন। তার বিশ্বাস, নতুন শিক্ষা নিয়ম অনুসারে 2035 সালের মধ্যে বিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তির হার বৃদ্ধি করে 50 ভাগে উন্নত করার যে পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে তা সাফল্যমন্ডিত করা যাবে।
তিনি আরোও ব্যক্ত করলেন, নতুন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে শিক্ষা, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক সেক্টরে স্বশাসন চালু করার চিন্তাভাবনা চলছে। অপরদিকে সব প্রকার উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে যেটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে।

চলুন দেখে নিই এই নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে।

১. পঞ্চম শ্রেণি অর্থাৎ ক্লাস 5 পর্যন্ত পড়ুয়াদেরকে মাতৃভাষায় পড়ার উপর জোর দেওয়া হবে।

২.অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ওপর হিন্দি ভাষা কে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

৩. পূর্বের ১০+২ পদ্ধতিকে বাতিল করে গঠন করা হলো ৫+৩+৩+৪ । অর্থাৎ এই নতুন শিক্ষানীতিতে পূর্বের ব্যবস্থার সঙ্গে আরো অতিরিক্ত তিন বছর যুক্ত করা হলো। এর মাঝে প্রথম তিনটি বছর হবে অঙ্গনওয়াড়ি বা প্রাক প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা।এবার এই ব্যবস্থাটি নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ায় ভাগ করা হয়েছে: 3 থেকে 8 বছর বয়স পর্যন্ত থাকবে ফাউন্ডেশনাল স্টেজ বা ভিত্তি স্তর , এরপর প্রাক-প্রাথমিক তিনটি বছর, 8 থেকে 11 বছর বয়স পর্যন্ত থাকবে, একটি প্রস্তুতিমূলক পর্ব 11 থেকে 14 বছর বয়স এবং এরপর মাধ্যমিক স্তর হবে বয়স 14 থেকে 18 বছর।

৪. ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পাঠক্রমের মধ্যে থাকবে বৃত্তিমূলক শিক্ষা।

৫. দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নম্বরের পরিবর্তে শিক্ষার্থীর দক্ষতা এবং যোগ্যতার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হবে।

৬.বিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। বিশেষ করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠক্রমের পদ্ধতিতে। বর্তমানে দশম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান কলা ও বাণিজ্য এই তিনটি বিভাগের একটি কে বেছে নিতে হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিভাগগুলি আর থাকছে না। উদাহরণ দিয়ে স্কুল শিক্ষা সচিব বুঝিয়ে দিলেন ব্যাপারটা। তিনি বললেন যে, কারোর ইচ্ছা হলে পদার্থবিদ্যার সঙ্গে বেকারি শিখতে পারে। তাছাড়া কেউ যদি রসায়নবিদ্যার সঙ্গে ইতিহাস পড়তে চায় তাহলে পড়তে পারবে। তাছাড়া এসব বিষয়ের মধ্যে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস হিসেবে সঙ্গীত এবং খেলাধুলার মতো বিষয় রাখা হবে।

৭. এখানে গ্রাজুয়েট বা স্নাতকদের ক্ষেত্রে 4 বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু করেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যে কোন সময় ইচ্ছা করলে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে পারবেন। কেউ যদি দু বছর পড়াশোনা করেন তাহলে সেটি ডিপ্লোমা লাভ করবেন। অন্য দিকে কেউ যদি মাত্র এক বছর পরে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তাহলে তারা ভোকেশনাল পেশাদার কোর্স শিখতে পারবেন।

৮. আইন এবং মেডিকেল ব্যতীত আর সমস্ত উচ্চশিক্ষার ইনস্টিটিউট গুলি একই নিয়ন্ত্রক বোর্ড এর অধীনে আনা হবে।

৯.সরকারি এবং প্রাইভেট সবরকম হায়ার এডুকেশন এর জন্য একই নিয়ম এবং পদ্ধতি থাকবে।

১০. অতি শীঘ্রই শিক্ষার প্রসারের জন্য ভারতের জিডিপির 6 শতাংশ লগ্নি করবে সরকার।

১১.শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ভান্ডারের প্রাকটিক্যাল দিকের উপর বেশ করে বোর্ডের পরীক্ষা গুলো সংঘটিত হবে।

১২. এম.ফিল কোর্সটি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন শিক্ষা মন্ত্রক অধিকারী গণ।


এইচইসিআই (HECI) অর্থাৎ হায়ার এডুকেশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া এর ক্ষেত্রে চারটি নির্দিষ্ট বোর্ড গঠিত হয়েছে – জাতীয় নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল (NHERC), মান নির্ধারণের জন্য সাধারণ শিক্ষা কাউন্সিল (GEC), অর্থায়নের জন্য উচ্চশিক্ষা অনুদান কাউন্সিল (HEGC) এবং অনুমোদনের জন্য জাতীয় স্বীকৃতি কাউন্সিল (NAC) থাকবে।

Surajit Joarder

৩৬৫ রিপোর্টার বাংলা ওয়েবসাইট এর অ্যাডমিন। আমি বিনোদন সম্পর্কিত টপিক ভীষণ ভালোবাসি। তাই আমি মেইনলি মুভি, ওয়েব সিরিজ, সিরিয়াল নিয়ে পোস্ট লিখে থাকি।