রাজ্যসর্বশেষ

অমানবিকতার নজির করল শান্তিপুর, চোখের সামনে মাকে হারালেন ছেলে

করোনা আবহের মধ্যে করোনা রোগীদের নিয়ে অমানবিক ঘটনা প্রায়ই ঘটে চলেছে অমানবিক ঘটনা। যার সাক্ষী থাকে বহু মানুষ। এবার ঘটনাস্থল শান্তিপুর। কিছুদিন আগে শান্তিপুরের চার নম্বর ওয়ার্ডে কামার পাড়া (news from Shantipur, Kamarpara, 4 no. ward) এলাকার বৃদ্ধ দম্পতি জ্বরে আক্রান্ত হয়। ২৪ তারিখ লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে ২৬ তারিখ ৬৫ বছরের বৃদ্ধের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তারপর বৃদ্ধকে ভর্তি করা হয় রানাঘাট কোভিড হাসপাতালে।

বৃদ্ধ দম্পতির মধ্যে বৃদ্ধা‌র রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও জ্বর কমেনি। যেহেতু বৃদ্ধ করোনা পজিটিভ ছিল তাই বৃদ্ধাকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বৃদ্ধা‌র ছেলে তৎপর হয়। তবে কোনরকম যানবাহন পাননি তিনি। অ্যাম্বুলেন্স, টোটো বা যানবাহনের চালকেরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয় বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে।

এরফলে বেশ কিছুক্ষণ বাড়িতেই পড়েছিলেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধার অসহায় ছেলে দ্বারস্থ হন প্রাক্তন কাউন্সিলরের কাছে। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর-এর সদস্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন। সন্ধ্যে ছটা নাগাদ সেই অ্যাম্বুলেন্স আসে এবং পিপিই কিট ছাড়াই দুজন দূর থেকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য বলেন। ততক্ষণে বৃদ্ধার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। এরপর রাত আটটা নাগাদ শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার বৃদ্ধা‌কে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

যেহেতু বৃদ্ধা জ্বরে ভুগছিলেন তাই দ্বিতীয়বারের জন্য ২৬ তারিখ নমুনা সংগ্রহ করে শান্তিপুর হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে সেই রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃতদেহ সৎকার ব্যবস্থা করা যায়নি। বৃদ্ধা‌র পরিবারকে হাসপাতালের তরফে জানানো হয় যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে পরিবারকে বৃদ্ধার মৃতদেহ দেওয়া হবে না। যদি নেগেটিভ রিপোর্ট আসে তবে পারলৌকিক ক্রিয়া করার জন্য মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এরপর রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ রানাঘাটের মর্গে বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত বৃদ্ধার ছেলে যারা যেটুকু সহায়তা করেছিলেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং প্রশাসন ও হাসপাতালকে আরো বেশি তৎপর হতে অনুরোধ করেছেন। অ্যাম্বুলেন্স এবং অন‍্যান‍্য চালকদের মানবিক হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

বৃদ্ধার ছেলে আক্ষেপের সুরে জানান, রিপোর্ট নেগেটিভ থাকা সত্ত্বেও তিনি তার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি। শুধুমাত্র যানবাহন বা অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে। তিনি কামনা করেছেন, এই রকম ঘটনা যেন আর কোন সন্তানের মায়ের সঙ্গে না ঘটে সেদিকে নজর দিক প্রশাসন।