সর্বশেষসাহিত্য - গল্প, কবিতা, ছড়া

উত্তরাধুনিক – সুস্ময় । Uttaradhunik -Susmoy – A Bangla Short Story

আমি একদমই জানতাম না বিয়ের আগে আমার ওয়াইফ এর চারটা বয়ফ্রেন্ড ছিল। এগুলা আবার ভিন্ন ভিন্ন সময়ে না, একই সময়ে৷
এনিওয়ে, বোকামিটা আমারই হইসে, এত কিউট, অরগানাইজড, ব্যক্ত্বিত্ব সম্পন্ন মেয়ের, চারটা কেন, এক ডজন বয়ফ্রেন্ড থাকা উচিত। সি ক্যান হ্যান্ডেল।
সেদিন অফিস ছুটির ঘন্টাখানিক আগে ও ফোন দিয়ে বলল, সে মাসিবাড়ি যাবে, রাত ওখানেই থাকবে। মেসতুতো বোনগুলার সাথে টিকটক লাইকির ভিডিও বানাইবে। ইনফ্লুয়েন্সার দের কোলাব টোলাব কি সব করতে হয়, আমি অতসত বুঝি নাই।

পরদিন উইকেন্ড, সো আমিও ভাবলাম রাত করে বাসায় ফিরি৷ বন্ধু মফিজ ইদানিং ঢাকার বিভিন্ন বারে গান টান গায়৷ ওর লগে গেলে ফ্রি ড্রিংকস মেলে। আজকে হোটেল ৭১ এর জেন্টলমেন্স রেস্ট এ শো আছে। আগে থেকেই যাওয়ায় জন্য প্যান প্যান করতেসিলো, ওইখানেই যাই। এর চেয়ে ভাল থার্সডে নাইটে আর কি ই বা হতে পারে।

দুই পেগ চিভাস রিগাল আর ছয়টা বিয়ার দিয়ে হালকা গলা ভিজিয়ে, মফিজ এর লগে আড্ডা দিচ্ছি। ভাবলাম ওয়াইফরে একটা ফোন দিই, সে রিসিভ করে জানালো হেবি ব্যস্থ আছে। মাসির বাসায় প্রচ্চুর মাজা হচ্ছে। কথা বলতে পারতেসে না৷ গানের আওয়াজে আমিও ভাল শুনতে পাইতেছিলাম না৷ লাবিউ টাবিউ বলে রেখে দিলাম।

story uttaradhunik by susmoy

তখন সিগারেটের নেশা ধরল। হোটেলের আট তলায়, বাইরে স্মোকিং জোনে মফিজরের লগে দাড়াইয়া জটিল আলাপ আলোচনা করতেসিলাম। বিটকয়েন ইথিরিয়াম এর ফিউচার, তুরস্কে ইরদোগানের ভুমিকা, ফেমিনিজম, কে-পপ, গাজার মার্কেটপ্রাইস এইসব নিয়ে কথা বলার ফাকে দেখি স্লিভলেস ব্লাউজে সুন্দর একটা মেয়ে, এক পোলার লগে চেক ইন করতেসে ফ্রন্ট ডেস্কে।

মজিস খোচা দিয়ে বললো,
” মামা, দেখসোস। এগুলা কিন্তু হাজবেন্ড ওয়াইফ না। দেইখাই বোঝা যায়।”
আমি বললাম,
“হ, মামা। মাইয়াটা কিন্তু সুন্দর আছে।”
সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়া, মেয়েটারে ভালমত চেক আউট করতে গিয়েই খটকা লাগল।

বললাম,
“মামা, মাইয়াটারে তো চেনা চেনা লাগতেছে।”
মফিজ আমার থেকে দুইহাত লম্বা একটা টান দিয়ে, চিন্তিত মুখে বলল।
“হ মামা, একদম চেনা। মাথায় আসতেসে কিন্তু মুখে আসতেছে না। “
চেনা চেনা লাগা মেয়ে আর অচেনা পোলাটার দিকে আমরা রগরগে রক্তচক্ষু দিয়ে চেনার চেষ্টা করতে লাগলাম।

আমাদের সামনে দিয়ে ওরা দুজনে হেটে সাইডে এক্টা রুমে ঢুকল। মেয়েটা কোনদিকে তাকাইতেছে না। রুমে ঢুকে দরজা লাগানোর মুহুর্তে মেয়েটার লেফট আর্মে একটা ট্যাটু দেখে মাথা ক্লিয়ার হয়ে গেল।
বব মার্লে !!
হাসতে হাসতে মফিজরে বললাম। মামা চিনসি তো মেয়েটাকে।
এইটা আমার ওয়াইফ। মফিজ আমার চেয়ে জোরে হেসে উঠে বললো, “এক্সাক্টলি, আমিই এইটাই বলতে চাইতেসিলাম ! “

হাসতে হাসতে আমরা দুইজন পাশের ডাস্টবিনে হালকা বমিও করে ফেল্লাম। নিজের ওয়াইফ রে চিনতে পারি নাই। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিই বা হইতে পারে৷
পরদিন বিকেল নাগাদ ওয়াইফ বাসায় ফিরলো। আগেরদিনের ঘটনাটা বলব কিনা ভাবতেছিলাম। হুটহাট করে বলেই ফেল্লাম। ওয়াইফ ভীষন রেগে গেল, সে বলল, ” যা বুঝো না, সেটা নিয়ে কথা বইলো না! “
কথা সইত্য, এক্সট্রা মেরিটাল এফেয়ার বিষয়টা নিয়ে আমি অত্যন্ত কম বুঝি৷ রাগের মাথায়ও এমন লজিকাল কথা বলাতে ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বহুগুন বেড়ে গেল।

তারপর সে নিজ থেকেই এক্সপ্লেইন করতে লাগল৷ যার সাথে গেসিলো, সে অনেক পুরান বন্ধু, একসময় বয়ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু এখন আর নাই। খুব ভাল টার্মস আছে তাদের ভিতরে। আর আবাসিক হোটেলে একসাথে কাপল রুমে থাকা মানেই যে খারাপ কিছু এরমটাও ভাবা ঠিক না। এখনকার ছেলে মেয়েরা অনেক নোবল পারপাস নিয়েও নাইট স্টে করে। যেগুলা আমার মাথায় ঢুকবে।
কথাটায় আর্গুমেন্ট নাই, গেটস ফাউন্ডেশনের যত বড় পোস্টেই থাকি না কেন চিন্তাভাবনার দিক দিয়ে আমি যে নেইভ, এইটা মানতেই হবে।

একটু জাস্ট বলতে লাগসিলাম, আমিও যদি মেয়ে বন্ধুদের সাথে একটু মিশি তাইলে কি কোন সমস্যা আছে।
সে চোখমুখ লাল করে ফেললো, বলল, ” তোমরা সব পুরুষই এক রকম, ক্যারেক্টারলেস! আমার সাথে কি তোমার কম্পিটিসন ! লজ্জা লাগে না? “
কথা বলাটা যে ভুল হইসে পরে বুঝলাম।
মাফ টাফ চেয়ে, “ফুডকুত্তা “থেকে ওর পছন্দের খাবার অর্ডার করে খাইলাম একসাথে।

এই সময়ে রান্না বান্না বা হাউজহোল্ড কাজের মত বেসিক লাইফস্কিলে সময় ক্ষেপন করার মত সময়ের অপব্যয় আর নাই। এরচেয়ে ফেসবুক টুইটার দুইমিনিট বেশি সময় দিলে কার কি বাশ গেল, বা কার সৌভাগ্য দেখে নিজের জ্বলুনিটা একটু বাড়ল এই খাতে খরচ করাটা ক্লেভার মুভ।

রাত অনেক হইসে, শুয়ে আছি৷ আজকে পুর্নিমা মনে হইতেসে৷ চাদের আলো থাই গ্লাসে প্রতিসরিত হয়ে ভ্যাবদা মেরে গেছে। মনে হইতেছে হাজার হাজার অশরীরি এই ঘরে বন্দী হয়ে আছে। মনে হইতেছে এই আলো আধারির নিজস্ব দুঃখবোধ আছে, এই অবাঞ্চিত অশরীরিগুলা নিঃশব্দে চিতকার করতেছে ।

বিছানার অন্য কোনায়, ওয়াইফ নিচু গলায় কারো সাথে কথা বলছে। অদ্ভুত শব্দ শোনা যাচ্ছে মাঝে মধ্যে, ঘুম ঘুম ওর কন্ঠটা আমার বড়ই সৌন্দর্য লাগে। আমি কান খাড়াইয়া আছি, যদি দু একটা শব্দ শোনা যায়।
ব্যাপার টা দৃষ্টিকটু, হু কেয়ারস। এখানে অনধিকার প্রবেশ করা সামান্য ভোতা জোছনা আর অসহায় অশরীরি ছাড়া দেখবার কেউ নেই।

N.B. : ‘Character, events used are imaginary. Any similarity found, It’s your fault, not mine.’- Sus Moy (Writer of the story) 😂

প্রিয় পাঠকেরা, এই ‘উত্তরাধুনিক’ গল্পটি লিখেছেন সুস্ময় বিশ্বাস। আপনাদের কেমন লাগলো গল্পটি ? তা অবশ্যই আমাদেরকে জানান। আপনারাও পাঠাতে পারেন আপনাদের লেখা গল্প। পাঠানোর ইমেইল এড্রেস [email protected]. This unique story has been first published in 365 Reporter Bangla Web Portal.

Surajit Joarder

৩৬৫ রিপোর্টার বাংলা ওয়েবসাইট এর অ্যাডমিন। আমি বিনোদন সম্পর্কিত টপিক ভীষণ ভালোবাসি। তাই আমি মেইনলি মুভি, ওয়েব সিরিজ, সিরিয়াল নিয়ে পোস্ট লিখে থাকি।