জেনে নিন নবরাত্রি তে পূজিত মা দুর্গার নয়টি রূপের সৃষ্টি এবং রহস্য
আজ থেকে শুরু হয়ে গেল দেবীপক্ষ। আজ প্রথমা।আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা যে দেবী পার্বতীর দুর্গার রূপ কে আমরা নয় ভাবে পুজো করে থাকি। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই রূপগুলো দেবী পার্বতী নয়টি ভিন্নরূপ। এই নয়টি রূপ যথাক্রমে, এই নয় রূপ হল যথাক্রমে – শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী । (Creation and mystery of nine avatars of Goddess Durga worshipped in Navratri)
যখন আমাদের দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়, তখন মহারাষ্ট্রের মানুষদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় নবরাত্রি। এই নবরাত্রি মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে একটি বড় উৎসব, ঠিক যেমন আমাদের কাছে দুর্গাপূজা। টানা ৯ দিন ধরে বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় নবরাত্রি। নবরাত্রি অনুষ্ঠানে প্রতিদিন মা দুর্গার একেকটি রূপে পূজা করা হয়। এই নয় যে রূপের বর্তমান দেবী পার্বতীর দুর্গা রূপ, যিনি কিনা দমন করেছিলেন অসুর কে। (Maa Durga daman koren asur)
আসুন আজকে জেনে নিন, মা দেবী দুর্গার এই নয়টি রূপের মাহাত্ম্য।
১. শৈলপুত্রী: এই রূপ মা দুর্গার প্রথম রূপ। মা শৈলপুত্রী বাহন হল বৃষ। এনার দক্ষিণ হস্তে থাকে ত্রিশূল এবং বাম হস্তে থাকে কমল অর্থাৎ পদ্ম। ইনি পূর্বজন্মে নন্দিনী সতী দেবী ছিলেন। আমরা সকলেই জানি বাবার অমতে মহেশ্বর কে বিয়ে করেছিলেন সতী। প্রতিশোধ নেবার জন্য মেয়ে জামাইকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে অপমান করেছিলেন দক্ষ। স্বামীর অপমানে অপমানিত হয়ে দেহত্যাগ করেছিলেন সতী। পরজন্মে হিমালয় কন্যা পার্বতী রুপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহামায়া। শৈল রাজ হিমালয়ের কন্যা হবার জন্য দেবী পার্বতীর অন্য নাম শৈলপুত্রী। নবরাত্রির প্রথম দিনে মা শৈলপুত্রী র আরাধনা করা হয় (Shailputri Durga Vahan Brisha. Medium of Shailputri Durga is Taurus)।
২.ব্রহ্মচারিণী: দ্বিতীয় রাতে পুজো করা হয় নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণীর। যিনি ব্রহ্মাকে স্বয়ং জ্ঞান করেছিলেন দান। দেবীর ব্রহ্মচারিণী রূপ, অতি মহিমামণ্ডিত। তিনি ডান হাতে ধরে থাকেন জপের মালা, এবং বাম হস্তে ধারণ করেন কমণ্ডলু।
৩.চন্দ্রঘণ্টা: এবার মস্তকে অর্ধচন্দ্র থাকার কারণে এই দেবীকে ডাকা হয় চন্দ্রঘণ্টা নামে। দেবী রায় সরূপ পরম কল্যাণকারী। এনার হাতে থাকে কমণ্ডলু, গদা, ত্রিশূল, পদ্ম, জপমালা।
৪.কুষ্মাণ্ডা: চতুর্থ রূপকে আমরা কুষ্মাণ্ডা নামে জানি। চতুর্থী তিথিতে কুষ্মাণ্ডা রূপে আদ্যা শক্তি কে আহবান করা হয়। দেবী সিংহ বাহিনী, ত্রিনয়নী এবং অষ্টভূজা। তার হাতে থাকে সুদর্শন চক্র, ধনুর্বাণ, রক্তপদ্ম এবং কমণ্ডলু। ((Kushmanda Maa Durgar Bahan vahan singha))
৫.স্কন্দমাতা: পঞ্চম শক্তি হল স্কন্দমাতা। কার্তিকের আর এক নাম হলো স্কন্ধ। স্কন্ধের জননী হওয়ায় তাকে স্কন্দমাতা বলা হয়।
৬.কাত্যায়নী: বৈদিক যুগে কাত্যায়ন নামে এক ঋষি ছিলেন। এক পুত্রের পিতা কাত্যায়নের ইচ্ছে ছিল কন্যা সন্তান লাভের। দেবী পার্বতী কে সন্তুষ্ট করে তার গর্ভে যে সন্তান আসে তার নাম রাখা হয় কাত্যায়নী। নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে পুজো করা হয় কাত্যায়নী কে।
৭.কালরাত্রি: কৃষ্ণবর্ণ এই দেবী পূজিত হয় সপ্তম দিনে। তার কণ্ঠে থাকে বিদ্যুতের মালিকা। দেবীর বাহন গর্দভ। ত্রিনয়নী দেবীর নিঃশ্বাসে বেরিয়ে আসে আগুনের হল্কা।
৮.মহাগৌরী: হিমালয় কন্যা গৌরবর্ণা মহাদেবের তপস্যা করে কৃষ্ণা হন। মহাদেব যখন গঙ্গা জল দিয়ে তাকে স্নান করিয়ে দেন, তখন তিনি আবার ফর্সা হয়ে ওঠেন। তার এই রূপের নাম মহাগৌরী। পুরান মতে মনে করা হয় যে, অষ্টম রাতে তাকে পুজো করলে সব পাপ ধুয়ে যায় মানুষের।
৯.সিদ্ধিদাত্রী: নবদুর্গার নবম এবং শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী। সিদ্ধিদাত্রীর আশীর্বাদেই সব সিদ্ধিলাভ করেছিলেন মহাদেব। সিদ্ধিদাত্রী চতুর্ভূজা রূপেও দেখা যায়। নবম অর্থাৎ শেষরাতে পুজো করা হয় তাকে।
এই হল দুর্গাপূজার পাশাপাশি মা দুর্গার নয়টি রূপের মাহাত্ম্য (Nine form/avatar of Devi Durga- Shailputri, Brahmacharini, Chandraghanta, Kushmanda, Skandamata, Kathyayini, Kaalratri, Maha Gauri, Siddhidatri)