জীবনযাত্রাসর্বশেষ

শরীরচর্চাই সঙ্গী হোক বন্দিদশায়

করোনা আবহে আনলক পর্ব শুরু হলেও বন্দিদশা থেকে মুক্ত পায়নি অনেকেই। বিশেষত পড়ুয়া ও বয়স্করা এখনো অনেকেই গৃহবন্দি। অনলাইন ক্লাস কিংবা অফিসের ওয়াক-ফর্ম-হোম অথবা একইভাবে অনেকক্ষণ বসে ল্যাপটপ বা মোবাইলে সিনেমা বা সিরিজ দেখা। ফলে শরীরের নড়াচড়া করা বা শরীরচর্চা মানুষ ভুলতে বসেছে বললেই চলে।

বাড়িতে থাকার দরুন বাড়ির কাজ করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু অফিস যাবার পথে দৌড়ে বাস-মেট্রো ধরা কিংবা তাড়াহুড়োতে লিফট্ মিস করে সিঁড়ি ভাঙার মতো হুড়োহুড়ি এখন বন্ধ। বয়স্করা অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন বই পড়ায়। তার ফলে শরীরী-কসরত কিছুই হচ্ছে না। ফলে বেড়ে চলেছে ঘাড়ে, হাতে-পায়ে বা কোমরের পেশীর টান জনিত সমস্যা।

বাড়ির কাজ সামলে কিছুটা সময় যদি শরীরচর্চার জন্য বের করা যায়। তাহলে মন এবং শরীর দুটোই ভালো থাকে। কিন্তু শরীরচর্চা শুরু করার আগে আপনাকে বিশেষ কিছু সতর্কীকরণ মেনে চলতে হবে। আপনার শরীরের পক্ষে শরীরচর্চা ঠিক কতখানি প্রয়োজন তা জেনে নেওয়া জরুরি।

● শরীরচর্চা শুরুর কথা:

শরীর ও মন একইসঙ্গে সুস্থ ও শান্ত রাখার একমাত্র পথ যোগব্যায়াম। তাই মনস্থির করে নিয়ম মেনে আজই শুরু করুন শরীরচর্চা।

★ প্রথমেই মনে রাখবেন আপনি যখন প্রথম শরীরচর্চা শুরু করছেন আপনি শিক্ষানবীশ। অনলাইনে যারা যোগব্যায়াম শেখায় তাদের মত শারীরিক ক্ষমতা আপনার হবেনা। তাই হীনমন্যতায় না ভুগে আস্তে আস্তে শুরু করুন।

★ প্রথমেই অতিরিক্ত শারীরিক কসরত করা ঠিক হবে না।

★ প্রথম দিন খোলা জায়গায় ৩০-৪০ মিনিট হাঁটতে পারেন। জোরে জোরে যতটা আপনি পারেন। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত জুতো। এর ফলে শরীরে রক্তসঞ্চালন এবং জোর বাড়বে। এরসাথেই শরীর প্রস্তুত হবে ওয়ার্ক আউটের জন্য।

★ প্রথম দিন শরীরচর্চার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে দিনযাপন বেঁধে ফেলতে হবে একটি রুটিনের মধ্যে। ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা এবং ঘুমোতে যাওয়ার জন‍্য নির্দিষ্ট কিছু সময় ঠিক করতে হবে।

শরীর‌চর্চার উপযুক্ত খাদ‍্যভ‍্যাস:

★ তার সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ছাড়াও খনিজ লবণ ও ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এর সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল, শাকসবজি, মরসুমি ফল তালিকায় রাখতে হবে।

★ অতিরিক্ত তেল মশলা ও ভাজাভুজি খাওয়ার একেবারে বাদ দিতে হবে। ফলে শরীরচর্চার ফলাফল দেখতে পাবেন হাতেনাতে।

সঙ্গী হোক যোগব্যায়াম:

★ ফ্রিহ্যান্ড কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। স্ট্রেচিং জাতীয় ব্যায়াম করলে শরীর ফ্লেক্সিবল হবে। এর ফলে পেশিতে টান লাগার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। সাথে দূর হবে ব্যথা-বেদনাও।

শরীর‌চর্চার সময়:

★ আপনার পক্ষে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি ব্যায়াম করা সম্ভব না হয়। তবে দিনের যেকোনো একটি সময় বা বিকেলের দিকে শরীরচর্চার জন্য নির্দিষ্ট সময় বের করুন।

প্রাণায়ামের ইতিবৃত্ত:

★ খাওয়ার অন্তত দু-তিন ঘন্টা পরে শরীরচর্চার শুরু করবেন। নাহলে মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব ও আরো নানান সমস্যা হতে পারে।

★ ব্যায়াম শুরুর আগে শরীর ও মনকে শান্ত রাখুন। যেভাবে সুবিধে হয় সেই ভাবে প্রথমে বসে, চোখ বন্ধ করে গভীর ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে মনসংযোগ করুন।

★ হাঁটা জগিং বা ব্যায়াম শেষ হলে শরীর শান্ত করা বিশেষ প্রয়োজন।

★ শরীরচর্চার সময় কখনোই মোবাইলের দিকে মন দেবেন না। এই সময় মোবাইল দূরে রাখুন।

শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী শরীরী-কসরত:

★ নিজের বয়স অনুযায়ী শরীরচর্চা করলে সুফল লাভ করবেন।

★ ৩০-৩৫ বছরের কম যাদের বয়স তারা জোরে হাঁটা, জগিং ইত্যাদি করলে, শরীরের জোর বাড়ার সাথে সাথে ইমিউনিটিও বাড়ে।

★ যোগব্যায়ামের শুরুতে ভুজঙ্গআসন, শলভাসন ইত্যাদি করতে পারেন।

★ কমবয়সীরা পুশ‌আপ এবং বয়স্করা ওয়াল পুশ‌আপ করতে পারেন।

★ এর সঙ্গে প্রাণায়াম বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলে ফুসফুসের সুস্থতার বাড়ে।

★ ব্রিদিং এক্সারসাইজ ফুসফুসের সুস্থতা নিয়ন্ত্রণ করে ঠিকই। কিন্তু কখনোই একেবারে ১০-১৫ বারের বেশি শ্বাস নেওয়া-ছাড়ার মত ব্যায়াম করা উচিত নয়। এর ফলে প্রেসার লো হয়ে অসুস্থ হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সবশেষে

তাই শরীরচর্চা শুরু করার আগে নিজের শরীরের ক্ষমতা জেনে শুরু করাই ভালো। সঠিক পদ্ধতিতে শরীরচর্চা করলে সুস্থতার সঙ্গে মন ভালো থাকে। উক্ত টিপসগুলো মাথায় রাখুন এবং শরীরচর্চা শুরু করুন। সুস্থ থাকার তাগিদে আনলক পর্বে যতদিন না জিম খোলে, ততদিন পর্যন্ত বাড়িতেই ভরসা রাখুন যোগ ব্যায়াম, প্রাণায়াম, ফ্রি হ্যান্ড এর মতো শরীরচর্চার ওপরে।