বাংলাদেশবিদেশবিনোদনসর্বশেষ

আমরা কি মনে রেখেছি চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানকে? আজ তার ৮৫তম জন্মদিন

“প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি, হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে, তাই। মৃত্যুর খবর আসে। মরা মানুষ দেখি। মৃতদেহ কবরে নামাই। পরক্ষণে ভুলে যাই।”-এই লাইনগুলো স্থান পেয়েছে জহির রায়হানের লেখায় (সময়ের প্রয়োজনে: জহির রায়হান)।

জহির রায়হান, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, উপন্যাসিক এবং গল্পকার, আজ তার ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৩৫ সালে আজকের দিনে বর্তমান বাংলাদেশের ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন ১৯৫৮ সালে।

প্রথম জীবনে জহির রায়হান ১৯৫০ সালে “যুগের আলো” পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীকালে “খাপছাড়া”, “যান্ত্রিক”, “সিনেমা” পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৫৬ তে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন “প্রবাহ” পত্রিকায়। “সূর্যগ্রহণ” তার প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৫-তে।

চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে।”জাগো হুয়া সাভেরা” তার প্রথম কাজ। এরপর সালাউদ্দিনের ছবি “যে নদী মরুপথেতে” সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত পরিচালক এহতেশাম এর “এদেশ তোমার আমার” ছবিতে কাজ করার জন্য জহির রায়হানকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি এই সিনেমাতে নাম সংগীত রচনা করেছিলেন।

১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি “সঙ্গম” তৈরি করেছিলেন। উর্দু ভাষার ছবি ছিল এটি। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। জহির রায়হানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেওয়া”-তে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৬৪ সালে “কাঁচের দেওয়াল” ছবি নির্মাণের জন্য তিনি নিগান পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তার পরিচালনায় অন্যান্য সিনেমাগুলি হল “বেহুলা”, “সঙ্গম”, “আনোয়ারা”।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় আসেন। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রচার অভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কলকাতায় তার সিনেমা “জীবন থেকে নেওয়া”-এর বেশ কয়েকটা প্রদর্শনী হয়। চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ এবং ঋত্বিক ঘটক। তৎকালীন সময় তিনি নিজের অভাব সত্বেও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী থেকে প্রাপ্ত অর্থ তুলে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের তহবিলে।

জহির রায়হানে রচিত প্রথম উপন্যাস “শেষ বিকেলের মেয়ে” ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। তার অন্যান্য উপন্যাসগুলো “হাজার বছর ধরে”, “আরেক ফাল্গুন”। “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছিলেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার।

১৯৭১ এর ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকায় ফিরে গিয়েছিলেন। ১৯৭২-এর ৩০ জানুয়ারির পর জহির রায়হানের খোঁজ পাওয়া যায়নি। রহস্যজনকভাবে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান।চলচ্চিত্র‌কার জহির রায়হানের দুই স্ত্রী সুমিতা দেবী ও সুচন্দা (Sumita Deva And Suchanda- Two Wives Of Zahir Raihan)। জহির রায়হানের দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান বর্তমানে দুজনেই নাট্যকার। তার আরেক ছেলে তপু রায়হান অভিনেতা।

বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন (Zahir Raihan Earns Bangla Academy Literary Award in 1972)। ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার অনন‍্য অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করা হয়।

চলচিত্র জগতে তার অবদানের জন‍্য তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বর্তমানে বাংলা সিনেমার জগত এই চলচ্চিত্র স্রষ্টাকে কতটা মনে রেখেছে সেটিই আজ প্রশ্নের মুখে। এই প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের জন্মদিনে শ্রদ্ধা রইল ৩৬৫ রিপোর্টারের তরফ থেকে (Zahir Raihan sir, we, 365 reporter bangla salute you in your 85th birthday)।