জীবনযাত্রাসর্বশেষ

দিনের শেষে ক্লান্তি কিন্তু ঘুম অধরা? সমাধান আপনার হাতেই

বর্তমান সময় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই ঘুমের সমস্যায় (Sleep Problem) নাজেহাল। ঘুম নিয়ে সমস্যা দেখা যায় কৈশোর থেকে বার্ধক্য সমস্ত মানুষের মধ্যে।সারাদিন সমস্ত কাজের শেষে ক্লান্তি থাকলেও ঘুম সেই অধরা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি উপায় রয়েছে আপনার হাতেই। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাছাড়া, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষই অনিদ্রার শিকার।

ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলছেন সকলে অনিদ্রা (Sleeping Disorder)-এর শিকার না হলেও ঘুম নিয়ে সমস্যা সিংহভাগ মানুষের মধ্যেই রয়েছে। সুস্থ জীবনের অন্যতম ওষুধ ঘুম। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ঘরবন্দী অবস্থায় স্ট্রেস, টেনশন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা (Future Plans) নিয়ে উদ্বেগ অধিকাংশ মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সেই সমস্ত উদ্বেগকে সরিয়ে ফেলে ঘুমকে জয় করার (Sleep Solutions) অব্যর্থ কিছু টিপস দিলেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা। জেনে নিন সেই টিপস।

১.ঘুমোনোর আগে মোবাইল বা  ল্যাপটপ  দেখা (Excessive Use Of Mobile or Laptop):

এমনিতেই করোনা পরিস্থিতিতে মোবাইল বা ল্যাপটপ সব সময়ের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বেড়েছে স্ক্রিন টাইম। বাড়িতে থাকার জেরে ওয়ার্ক-ফর্ম-হোম, সিনেমা দেখা, হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে নিউজফিড স্ক্রল করা প্রভৃতির জন্য মোবাইল বা ল‍্যাপটপ ব্যবহার অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। সারাদিনের পর রাতে মোবাইল বা ল্যাপটপে সিনেমা দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকা ঘুমে বিস্তর প্রভাব ফেলছে। এলইডি স্ক্রিনের আলো চোখের সাথে সাথে ঘুমেও বড়োসড়ো ব্যাঘাত ঘটায়। ডিজিটাল স্ক্রিনের আলো মস্তিষ্ক থেকে মেলাটোনিন হরমোন (Melatonin Hormone)-এর নিঃসরণে বাধা দেয় যা ঘুম আসার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

২.ঘুমের আগে চা-কফি পান (Drinking Coffee or Tea Before Sleeping):

চিকিৎসকরা ঘুমানোর দু-তিন ঘণ্টা আগে ডিনার করে নেওয়ার কথা বলেন কিন্তু অনেকেরই অভ্যাস ডিনারের বেশ কিছুক্ষণ আগে চা বা কফি পান করা কিন্তু এই চা বা কফিতে থাকা ক্যাফিন-ই ঘুম আসতে বাধা দেয়। ক্যাফিন অ্যাড্রিনালিন হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় যা নার্ভ সজাগ রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়‌।

৩.তৈলাক্ত খাবার খাওয়া (Huge Fast Food eating):

অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে শরীরের সাথে সাথে ঘুমেও প্রভাব ফেলে। তৈলাক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যার জন্য শরীরে অস্থিরতা দেখা দিলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। 

৪.ধূমপান (Smoking):

ধুমপানের স্বাস্থ‍্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক তা বলা বাহুল্য। ধূমপান ফুসফুসের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যে রকম প্রভাব ফেলে সেরকমই ঘুমেও প্রভাব ফেলে। অনেকেই মনে করেন সিগারেট পান করলে রিল্যাক্স হওয়া যায়। কিন্তু সিগারেটে থাকা নিকোটিন ঘুমে প্রভাব ফেলে। 

৫.ঘুমোতে যাওয়ার আগে থ্রিলার বা ভয়ের সিনেমা দেখা (Watching Horror Movies Before Sleeping) :

অনেকেই থ্রিলার ভূতের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগে সিনেমা বা সিরিজ দেখার অভ্যাস অনেকের রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্ক্রিন টাইম বেড়ে যাওয়ায় সিনেমা সিরিজের  সঙ্গে সখ্যতা বেড়েছে।ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভয় বা থ্রিলারধর্মী কোন সিনেমা বা সিরিজ দেখলে তা গভীর প্রভাব ফেলে কারণ তা অ্যাড্রিনালিন হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। অ্যাড্রিনালিন(Adrenaline) নার্ভকে সজাগ করে এবং ঘুম আসতে বাধা দেয়।

 উপরিউক্ত প্রত্যেকটি অভ্যাসই ঘুম না আসার মূল কারণ। এই অভ্যেস গুলি বদল করতে পারলেই সহজে ঘুম না আসা বা অনিদ্রাজনিত সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। সুস্থ শরীরের অধিকারী হতে গেলে ঘুম যে অপরিহার্য তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই নিশ্চিন্তে ঘুমের জন্য সুষম খাদ্যভ্যাস(Balanced Diet), শরীরচর্চা (Exercise) এবং কিছু অভ্যাস (Lifestyle) বজায় রাখলেই সমস্যার সমাধান হবে।