কলকাতাসর্বশেষ

অভিযুক্তের নাম পরিবর্তন করে পুলিশিকে ভুল পথে চালিত করেছে আনন্দ‌পুরকান্ডের নির্যাতিতা‌

সম্প্রতি আনন্দপুরে ঘটে যাওয়া শ্লীলতাহানীর ঘটনায় ক্রমশ জল ঘোলা হয়ে চলেছে। নির্যাতিতা জিজ্ঞাসাবাদে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন পুলিশ আধিকারিকদের (New insights of Anandapur molestation case)। পাঁচ বছর ধরে অভিযুক্ত সঙ্গে আলাপ থাকার পরও অভিযুক্তের নাম গোপন করেছেন নির্যাতিতা (The victim tells wrong name to the police)। অভিষেক পান্ডের নাম বদলে পুলিশকে জানিয়েছেন অভিযুক্তের নাম অমিতাভ বসু। কেন তিনি তদন্তে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। সেইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আজ ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আনন্দপুর ঘটনায় নির্যাতিতা তরুণীকে।

ইতিমধ্যে ঘটনার পর দুদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও অধরা অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডে। ইতিমধ্যেই তল্লাশি শুরু হয়েছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আনন্দপুর থানার পুলিশ আধিকারিক‌দের তল্লাশিতে সাহায্য করছেন লাল‌বাজারের এআরএস (RAS of Lalbazar Police Station. Kolkata)। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তল্লাশিতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাতব্যাপী শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে‌ও এখনো অভিযুক্তের খোঁজ মেলেনি।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে ৩ বছরের বিবাহিত জীবনে অভিষেক পান্ডে দু-এক বছর সংসার করেন। কিন্তু তিনি প্রাক্তন স্ত্রীর ওপর নানা রকম অত্যাচার করায় সেই সম্পর্ক টেকেনি। অভিযুক্তের বাড়ির আশেপাশের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তিনি বিভিন্ন মহিলাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতেন এবং উশৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন। ডিভোর্সের আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল নির্যাতিতার সঙ্গে।

ঘটনার দিন শনিবার রাত আটটা নাগাদ নয়াবাদের ফলয়াটের সামনে থেকে হন্ডাসিটি গাড়ি করে অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডে নির্যাতিতাকে ঘুরতে নিয়ে যান। প্রথমে পাটুলির একটি রেস্তোরাঁয় তারা খাওয়া-দাওয়ার সারেন। তারা বাইপাসের ধারে কিছুক্ষণ ছিলেন। তারপর অজয়নগর, গড়িয়া, কালিকাপুর হয়ে আনন্দপুরে আসেন। তরুণী জানিয়েছিলেন বাড়ি ফেরার জন্য জোর করার পর‌ও তরুণীকে তার বাড়ির সামনে নয়াবাদে না নামিয়ে চৌবাঘার দিকে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডে।

তরুণী‌র তরফে বাধা দেওয়া হলে তরুণীকে মারধর করা হয় চলন্ত গাড়িতে। এরপর তরুণীকে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপরই তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। হাঁটুর নিচের অংশের হাড় ভেঙে দু টুকরো হয়ে যায়। আহত মহিলার সোমবার অস্ত্রোপচার হয় বাইপাসের ধারে এক হাসপাতালে। সফল হয়েছে অস্ত্রোপচার বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এই মুহূর্তে তার অবস্থা স্থিতিশীল।

এরপর অভিযুক্তের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে তরুণীকে নিয়ে পাটুলির রেস্তোরাঁয় যায় পুলিশ। সেখানে সিসিটিভি সংগ্রহ করা হলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাইপাসের যে সমস্ত সিগন্যালের সিসিটিভি ফুটেজ এ গাড়িটি ধরা পড়েছে সেখান থেকে গাড়ি নম্বর উদ্ধার করে তদন্তকারীরা। তারপরে গাড়িটিকে আটক করে অভিযুক্তের খোঁজে চালাতে গিয়ে তদন্তকারীরা ধন্দে পড়েন। তখনই জানতে পারেন অভিযুক্তের নাম অমিতাভ বসু নয় অভিষেক পান্ডে এবং নির্যাতিতা তরুণী পূর্ব পরিচিত। অভিযুক্ত যাদবপুরের বাসিন্দা এবং তিনি তরুনীর সহকর্মী ছিলেন। কর্মক্ষেত্র থেকেই তাদের পরিচয়। তবে কেন তিনি তদন্তে অভিযুক্তের নাম পরিবর্তন করেছিলেন সেই বিষয়ে আজ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে নির্যাতিতা তরুণীকে।