জীবনযাত্রাসর্বশেষস্বাস্থ্য

সুস্থ থাকার চাবিকাঠি আপনার হাতেই , জেনে নিন সেগুলি

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) এবং সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি, খাদ‍্য‌গ্রহণ ও শরীর‌চর্চার মতো নিয়মাবলী (General Health Tips) দরকার হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য চল্লিশটিরও বেশি পৌষ্টিক উপাদান প্রয়োজন। কোন খাদ্য উপাদান একা সেসব উপাদান সরবরাহ করতে পারেনা। সময়ের সাথে সাথে ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন। মধ্যাহ্নভোজ যদি উচ্চ চর্বিযুক্ত হয় তাহলে রাতের খাবার হতে হবে কম চর্বিযুক্ত। এরূপ ভারসাম্য শরীরের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়। সুষম আহার ও শরীর‌চর্চা দিতে পারে সুস্থ্যজীবন (Health Tips: Eat Balanced Diet And Exercise Daily)। জেনে নিন কি কি ধরনের সুষম খাবার ও অভ‍্যাস আপনার শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে (Balanced Diet And Lifestyle For Healthy Life)।

★ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার:

ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে শর্করা যুক্ত বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার রাখা উচিত (Carbohydrate jukto khabar)। যেমন: চাল, পাস্তা, আলু, রুটি ইত্যাদি। প্রতিদিন অন্তত এই খাদ্যগুলোর মধ্যে একটি খাদ‍্যতালিকায় থাকা প্রয়োজন। রুটি, পাস্তা এগুলি আমাদের শরীরে ফাইবার তৈরি করতে সাহায্য করে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তবে ডায়াবেটিসে ভুগছেন যারা, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা প্রয়োজন।

★ খাদ্যতালিকায় ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ:

খাদ্যতালিকায় ফ্যাট রাখা প্রয়োজনীয় কিন্তু তা কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে নয়। প্রাণীজ ফ্যাটের থেকে উদ্ভিজ্জ ফ‍্যাটের ওপরেই আস্থা রাখা প্রয়োজন। শরীরের অন্যান্য খাদ্য উপাদানের মতই ফ্যাটের প্রয়োজন। তবে সেক্ষেত্রে স্যাচুরেটেড ফ্যাট যা প্রাণীর দেহ থেকে প্রাপ্ত, এগুলি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাদ্য খাবার থেকে স্টিম বা বেক করে খাওয়া ভালো। মাংসের বা মাছের চর্বি যুক্ত অংশ বাদ দেওয়া উচিত। প্রাণীজ তেল থেকে উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করা উচিত।

★ প্রোটিন হোক সঙ্গী:

কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের মতোই শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন (Protein Is Beneficial For Health)। কোশের গঠন, শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ প্রোটিন উভয়ই খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। প্রোটিন হিসেবে মাছ, মাংস, সয়াবিন, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। তবে ডায়েট মেনে চলতে গেলে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে খাদ‍্যগ্রহন করা‌ই ভালো।

★ খাদ্য তালিকায় প্রচুর ফল ও সবজির নিযুক্তকরণ (Include Lot Of fruits And Vegetables In Your Food):

সুস্থতার জন্য কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিনের মতই ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন। ফল ও শাক সবজির মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। ব্রেকফাস্টের সঙ্গে তাজা ফলের রস, অন্তত একটি আপেল, বা বিকেলে স্ন‍্যাকস হিসেবে তরমুজ এবং বিভিন্ন শাক সবজির খাদ্য তালিকায় রাখা প্রয়োজন। শাক সবজির মধ্যে থাকা ফাইবার শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

★ খাবারে নুন চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ:

শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য খাবারে নুন চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন (Control Sugar And Salt In your Meals)। যারা উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন। তাদের খাদ‍্যে নুন গ্রহণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত নুনের ব্যবহার। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে চিনির বদলে মধু অল্প করে ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন ফল ব্যবহার করা যেতে পারে খাবার মিষ্টি করার জন্য।

★ নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ (Eat In A regular Interval):

কোনভাবেই খাবার সময় এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। অনেকেই ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে চলেন। ফলে খিদের পরিমাণ বাড়তে থাকায় একসঙ্গে অনেক খাদ্যগ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে একবারে অনেক না খেয়ে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস যথাযথ। খিদের সময় ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার না খেয়ে ড্রাই ফ্রুটস বা শাকসবজি স্যালাড, নুন ছাড়া বাদাম, পনির ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

★ তরল খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি :

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার জল পান করা উচিত (Drink Plenty Of Water)। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জল না হয়েও ফলের রস, দুধ বা স্মুদি ইত্যাদি নানা ধরনের তরল খাদ‍্যতালিকায় যোগ করা যেতে পারে।

★ সুস্থতার তাগিদে ওজন নিয়ন্ত্রণ (Control Body Weight):

শরীর সুস্থ রাখার জন্য খাদ্যতালিকায় সুষম খাদ্য যোগের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। লিঙ্গ, উচ্চতা, বয়স ইত্যাদি অনুসারে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার রোগের মত ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

★ শরীরচর্চা অভ্যাস হোক (Perform Exercise Daily):

খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য শরীরচর্চা সঙ্গী হোক (Shorir charcha ke sangi korun)। প্রতিদিন অভ্যাস করে যোগব্যায়াম করলে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে। শরীরের মুভমেন্ট বাড়ানো প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা, বিকেলে বা সকালে নিয়ম করে হাঁটা এবং ঘরের বিভিন্ন কাজ নিজে করার মতো শারীরিক সচলতা শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শরীরের সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শরীরে সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিও প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সুষম আহারের পাশাপাশি শরীরচর্চাও সঙ্গী হোক। উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে নিজের হাতে (How To Keep Yourself Healthy And Fit)। তাই নিয়মগুলি মেনে চলার (Sustho Thakar niyom kanun) জন্য আজ থেকেই শুরু হোক সুঅভ্যাস।