করোনা রোগী বলে অ্যাম্বুলেন্সে তুললেন না কেউ, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু
একনজরে
১. বনগাঁ হসপিটাল হতে ট্রান্সফার করে কলকাতার একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা সম্ভব হলো না একজন করোনা রোগীকে।
২. অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে ব্যর্থ হয় বনগাঁ হাসপাতালে বাইরেই মৃত্যু ঘটলো তার।
৩. করোনা রোগী বলে ওই লোকটি কে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো না।
৪. প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী জীবন মরণ যুদ্ধ করার পর হেরে গেলেন ওই ব্যক্তি।
বিস্তারিত
আমরা পুনরায় একজন করোনা Coronavirus রোগাক্রান্ত এর উপর হওয়া অমানবিকতার নিদর্শন দেখতে পেলাম। আর এই লোকটির নাম মাধব নারায়ন দত্ত। তিনি পশ্চিমবঙ্গ West Bengal-এর বনগাঁর লোক। শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে তার শ্বাস নিতে প্রচন্ড অসুবিধা হচ্ছিল। ফলে থাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল কোভিড ওয়ার্ডে এডমিশন করানো হয়েছিল।
কিন্তু রাত্রিবেলায় ক্রমশ তার শারীরিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে শুরু করে। ফলে ওই হাসপাতালের ডাক্তাররা তাকে কলকাতার একটি কোভিদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তো বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী কলকাতার হাসপাতাল রোগীকে স্থানান্তর করার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স Ambulance ব্যবস্থা করে ফেলা হয়।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না ঐ লোকের। কেননা প্রচন্ড শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই 68 বছরের লোকটির অ্যাম্বুলেন্সে তোলার জন্য কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন না। ওই লোকটির বউ বারবার আশেপাশের লোকজনকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর জন্য সহায়তা করার কথা বলেন। তিনি কাতর ভাবে সবার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু কেউই তার মিনতিতে সাড়া দেননি।
এমনকি পিপিই স্যুট পরিধান রত অবস্থার অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোন প্রকার সহায়তা করতে সম্মত হননি। ফলে বনগাঁর ওই হাসপাতালে বাইরেই মৃত্যু ঘটে -Man Dies in Bongaon- ৬৮ বছর বয়স্ক ওই দোকানদারের।
লোকমুখে জানা গেল এই গুরুতর অবস্থাতেও হাসপাতালের বাইরে প্রায় 30 মিনিট ছিলেন মাধব। জীবন মরণ যুদ্ধ করেছিলেন আর বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
অথচ ওই লোকটির বউ তার স্বামীকে প্রাণে রক্ষা করার জন্য হাসপাতালে আশেপাশের লোকজন ও রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া লোকজনের উদ্দেশ্যে কাতরভাবে মিনতি জানান। ভেবেছিলেন হয়তো কোন একটা লোক তার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেবে। তিনি অ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভারকেও মিনতি করে বলেন,”দাদা, আপনি তো পিপিই কিট পরিধান করে রয়েছেন। দয়া করে সহায়তা দিন।” কিন্তু তার মিনতিতে কোন প্রকার কর্ণপাত করেননি চালক।
দুর্বল এই মহিলাটি নিজের স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর জন্য নিজেই আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। আশেপাশের লোকজন বিভিন্ন ধরনের কথা বলছিল এই ব্যাপারটি নিয়ে। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন নি। একজন তো তাচ্ছিল্য করেই বললেন, “উনাকে সহায়তা করবে কে? সহায়তা করার কেউ নেই ওনার!”
অন্য একজন আবার দুর্বল মাধব নারায়ন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,” কাকা আপনার নিজেকেই ভেতর থেকে জোর আনতে হবে আর অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আপনি যদি নিজে থেকেই আম্বুলান্স পড়তে পারেন তবে এ যাত্রায় বেঁচে যাবেন।”
কিন্তু দুর্বল ওই ব্যক্তির সেই শক্তিটুকুও ছিল না। ফলে কলকাতার হাসপাতালে আর পৌঁছানো সম্ভব হলো না তার। অসহায় বউয়ের চোখের সামনেই মৃত্যুমুখে পতিত হলেন তিনি।
প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া এই সমস্ত অমানবিক ব্যাপার গুলো বিধ্বংসী করো না মহামারী কে আরো দুঃসহ করে তুলছে। কোন কোন সময় রোগীকে হাসপাতলে ভর্তির জন্য পাওয়া যাচ্ছে না অ্যাম্বুলেন্স। আবার কখনো অ্যাম্বুলেন্সে রোগী ওঠানোর জন্য কেউ সাহায্য করতে চাইছেন না। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে করোনার কালো ছায়া প্রচন্ডভাবে বিস্তার লাভ করেছে। ফলে চোখের সামনে কোন অসহায় মানুষকে মরে যেতে দেখতে পেলেও কেউ সাহায্য করছেন না।